ভাজিটেরিয়ান লোকজন নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। প্রায়শই নানান জিজ্ঞাসার মুখোমুখি হতে হয়। - মাছ মাংস না খেয়ে বেঁচে থাকা যায়?
- দেখছেন তো আমি বহাল তবিয়তে আছি।
- আপনার কোন অসুবিধা হয় না?
নানান প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে আমি নিজেই জিজ্ঞাসা করি।
- গরুর মাংস, দুধ, ঘি সব দেয়। আপনি কি কখনো দেখেছেন গরুকে মাছ মাংস খেতে?
কেউ কোন উত্তর দেন না। আমতা আমতা করেন। আমি মনে মনে বলি-
- গরু ঘাস খায়, দুধ দেয়। আমরা কত কি ভালো মন্দ খায়। আমরা কি দিতেছ?
ভেজেটেরিয়ান হওয়ায় আমার ঝামালা অনেক । যেখানে যাই শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন।
- কেন হলাম?
- কিভাবে হলাম?
নানান সময় নানা উত্তর দিতে হয়েছে। সময় আর ইচ্ছার অভাবে কাউকেও পূর্বো কারণ বলা হযনি।
বিয়ে দাওয়াতে সাধারনত খাইনা। অগত্যা যেতে হলে ঝামালায় পড়ে যাই। কাচ্চি বিরানী, রোষ্ট বা রেজালা কোনটাই আমার জন্য নয়। তবুও আপ্যায়নকারীদের পিড়াপিড়িতে খাওয়ার টেবিলে বসতে হয়। প্লেটটাকে উপুড় করে রেখে পানি খেতে থাকি। আমার এই অবস্থা দেখে পাশের ভদ্রলোক বলেন;
- আরে ভাই, বিয়ে বাড়িতে এসেছেন। লজ্জা করে লাভ কি ? নেন্ নেন্ খেয়ে নেন্।
- ভাই, আমি ভেজেটরিয়ান। মাছ মাংস কিছু খাই না। আমি বললাম।
- আরে ভাই একদিন খেলে কিছু হয় না। নেন তো ভদ্রলোক বললেন।
আমি ভদ্রলোককে কিছুতেই বোঝাতে পারছিনা। কি করবো ভাবতে ভাবতে বললাম ।
- খেলেই বমি করে ফেলবো।
- তাহলে দরকার নাই। সালাদটা খেয়ে নেন।
এই বলে ভদ্রলোক সালাদের প্লেটটা তুলে ধরলেন। সালাদের গায়ে রোষ্টের ঝোল, বোরহানীর ছিটা লেগে আছে। ইতস্থতো করছি। ভদ্রলোক তাড়া দিলেন।
- আরে ভাই নেন না। এটা তো ভেজিটেবল। অগত্যা হাতে নিয়ে ঝোল টিসু পেপার দিয়ে মুছে গিলতে হয়।
আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গেলে বিপদের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। খাচ্ছি না দেখে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলতে থাকেন ।
- আমি ভালো রান্না করতে পারি না বলে কিছুই মুখে দিবেন না।
যতোই বলি আমি মাছ মাংস খাই না। ততোই বাড়তে থাকে অভিযোগ । আবদারও শুনতে হয়।
- আজকের মতো খেয়ে নিন। অন্য দিন আপনার জন্য সব ধরনের সবজি ,ভাজি , ভর্তার ব্যবস্থা করবো।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য সাক্ষরতা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক থাকার সময় প্রকল্পের কাজে এক জেলা থেকে অন্য জেলা ছুটে বেড়িয়েছি। তখন থেকেই আমার সংগে আমিনুলের পরিচয়। আমিনুল প্রকল্প পরিচালকের ড্রাইভার। সে হিসেবে প্রায় আঠারো ঘন্টা আমার সংগে বসবাস। ওকে নিয়ে ময়মনসিংহ গিয়ে ছিলাম। ময়মনসিংহে রাত্রিযাপন, ভোরে নেত্রকোনা। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সংগে জড়িত এনজিওদের নিয়ে একটি কর্মশালায় অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষে ময়মনসিংহে এসে রাতে থেকে পরের দিন ঢাকা ফিরবো।
সেমিনার শেষ, সেমিনার আয়োজনকারীদের পক্ষ হতে ডাল ভাতের দাওয়াত করা হয়েছে। পোলাও, কাচ্চির সংগে ছিল নেত্রকোনার মহাশোল মাছের তরকারি। আমি ভেজেটেরিয়ান শুনে কর্মশালার আয়োজকদের মাথায় বাজ পড়লো। এলাকার একজন মহিলা কর্ণধার বাড়ী থেকে ভাত, ভাজি আর শাক আনলেন। ডাল কর্মশালার জন্য রান্না হয়েছিল। সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। আর যাই হোক আমাকে অভুক্ত থাকতে হবে না।
খেতে বসেছি। একটা একটা করে বাটি আমার সামনে খুলে ধরা হচ্ছে। লাল শাক সাথে গুড়া চিংড়ির শুটকি। আলু-বেগুনের তরকারী সংগে ছোট ছোট ট্যাংরা মাছ। ভাত আগেই বাড়া হয়েছিল। শাক পাতে তুলে দিবেন এমন সময় বললাম,
- আমি মাছ-মাংস খাই না। শুটকির গন্ধ পর্যন্ত সহ্য করতে পারি না।
- স্যার, শুটকি তো শুটকি। শুটকি তো মাছ নয়। কে একজন বললেন।
- দরকার নাই। বাদ দেন। ডালটা দেন। আমি ডাল দিয়েই খেয়ে নিবো। বললাম আমি।
একটা বড় গামলা থেকে ডাল নিয়ে প্লেটে নিয়েছি। দেখি মাছের কাঁটা আর গন্ধ।
- স্যার! রুই-এর মাথাটা দিয়ে ডালটা রান্না করা হয়েছে। বেশ স্বাদ হয়েছে, স্যার। খেয়ে দেখেন। গর্ব করে বললেন একজন আয়োজক।
কোন জবাব দিলাম না। কয়েকটা শুকনা ভাত নাড়া-চাড়া করে মুখে দিলাম। কর্মশালার আয়োজক আর অংশগ্রহণকারীরা খেতে ব্যস্ত। এক ফাঁকে আস্তে করে উঠে হাত ধুয়ে নিলাম। আমার খাওয়া হলো না।
কর্মশালা শেষ হলো। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ময়মনসিংহের দিকে রওনা দিলাম। পৌছতে পৌছতে রাত ৯টা বেজে গেল। আমি দুপুরে কিছু খাইনি। ড্রাইভার আমিনুল বিষয়টি লক্ষ্য করেছিল। তাই আমাকে নিয়ে সোজা গিয়ে একটা খাবার হোটেলে থামলো।
দোতলায় বেশ ছিমছাম হোটেল। মফস্বল শহরে রাত ৯.০০ অনেক রাত। প্রায় চেয়ার টেবিলগুলো ফাঁকা। বেশ কয়েকটা শীততাপ যন্ত্র আছে। বিদ্যুৎ লোডশেডিং চলছে। তাও ভালো জেনারেটর এর আলো আছে, ফ্যানও চলছে। হোটেল বয় এসে দাঁড়াতেই বললাম-
- ভাই, আমি ভেজেটিরিয়ান মাছ-মাংস খাই না। আপনার দোকানে আমার খাওয়ার মত কোন কিছু আছে কি?
- কেন থাকবে না, স্যার! এটা ময়মনসিংহের সবচেয়ে বড় খাবার হোটেল, বয় বললো।
- মাছ-মাংস ছাড়া যা আছে, তাই আনেন। আর ড্রাইভার সাহেব যা চায় তাই দেন।
কিছুক্ষণ পর বিরাট হাসি দিয়ে বয় ভাত আর তরকারি এনে টেবিলে রাখলো। বেগুন আলু সংগে কাঁচকি মাছ।
- স্যার, ডাল শেষ হয়ে গেছে। এক গাল হাসি দিয়ে বয় জানালো।
ড্রাইভার আমিনুল উঠে যেতে চাইলো। আমি বললাম;
- লাভ নাই। শেষে আপনারও খাওয়া হবে না। আপনাকেও উপোষ থাকতে হবে।
আমিনুলের খাওয়া শেষে রাস্তার একটা ইটালিয়ানাতে গিয়ে দাঁড়ালাম। একটা কলা আর সংগে একটা বন-রুটি। দাঁতে একটু বালু কচ্ কচ্ করলেও অমৃতের মতো লাগলো। কলা-রুটি পেটে নিয়েই হোটেলে গেলাম। রাত তিনটার দিকে ঘুম ভেংগে গেল। প্রচন্ড ক্ষুধা। আমিনুলকে ডেকে বললাম,
- বাসস্ট্যান্ড বা অন্য কোথাও গিয়ে কলা আর রুটি নিয়ে আসেন।
আমিনুল আমাকে না বলতে শিখতে পারেনি। রাত ৩টা। তাতে কি? সে দৌড় দিল কলা-রুটি আনার জন্য। আধা-ঘন্টা পর কলা-রুটি নিয়ে হাজির। কলা-রুটি খেয়ে ঘুম দিলাম। এরপর থেকে আমিনুল, আমার খাওয়া-দাওয়া নিয়ে অতিমাত্রায় সচেতন। কোন ট্যুরে যাওয়ার আগেই ঐ এলাকার সবাইকে জানিয়ে রাখি, আমি কেমন ভেজিটেরিয়ান।
২০০৬ সালের মাঝামাঝি আমার একজন জুনিয়র কর্মকর্তাকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যূরোর মহাপরিচালক করা হলো। আমি প্রকল্প পরিচালক। স্বেচ্ছায় সংস্থাপনে ওএসডি হলাম। ভেজিটেরিয়ানদের জন্য একটা ভালো পোস্টিং। কোন ট্যূরে যেতে হয় না। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কোন ঝামেলাও ছিল না। পরবর্তী পোষ্টিং জাতীয় সংসদ সচিবালয়। এখানেও কোন ঝুট-ঝামেলা নাই। বিপদে পড়লাম নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এসে। ট্রেনিং দেয়া, উদ্ধুদ্ধকরণসহ নানান কাজে প্রায় ঢাকার বাহিরে যেতে হয়। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে আমার ঝামেলা লেগেই থাকে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো হতে বিদায়ের সাথে সাথে আমার সংগে আমিনুলের বিচ্ছেদ হয়। উপানুষ্ঠানিক প্রকল্পটি শেষ হলে আমিনুল বেকার হয়ে পড়েন। আমিনুল বেকার জেনে তাকে নির্বাচন কমিশনের একটা প্রকল্প নিয়োগ দিলাম। কোন ট্যুর থেকে ফিরে আসলেই সবাই বিশেষ করে আমার অফিস সেক্রেটারী অনামিকা ড্রাইভার আমিনুলকে জিজ্ঞাসা করেন;
- আপনাদের ট্যুর কেমন হলো?
- ভালোই। স্যার, ভেজিটেরিয়ান তো। তাই খাওয়া-দাওয়া নিয়ে একটু যা ঝামেলা। আমিনুলের জবাব।
- শাক-সবজি পাওয়া এটা কোন ব্যাপার হলো।
অনামিকার এ প্রশ্নের জবাব আমিনুল কি দেয়, আমার জানা নাই।
২৯শে ডিসেম্বর ২০০৮ এ অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় নির্বাচন। তারপর ২২শে জানুয়ারী ২০০৯ এ শেষ হলো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। তবুও দৌড়াদৌড়ি শেষ হলো না। ২রা এপ্রিল ২০০৯ এর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সিডিউল তৈরী হলো। নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট-এর পরিচালক মোখলেছার রহমান ৬টি নির্বাচনী এলাকার ৫টিতে আমাকে প্রশিক্ষক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সিডিউল তৈরী করে এনেছেন। সিডিউল হতে আমার নাম কেটে দিলাম। মুখলেছ বললেন-
- সব জায়গা থেকে নাম কেটে দিলেন, স্যার। অন্ততঃ একটা জায়গায় প্রশিক্ষণটা দেন। ওরা উপকৃত হবে।
জানি না, কি মনে করে বগুড়া-৬ সংসদ এলাকার প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে নিজের নামটা রাখলাম। ২৬ মার্চ ২০০৯ তারিখে বগুড়ার উদ্দেশ্যে আমিনুলকে নিয়ে রওনা দিলাম। আমিনুল যথারীতি জেলা নির্বাচন অফিসারদের জানিয়ে রেখেছেন আমি ভেজিটেরিয়ান। জেলা নির্বাচন অফিসার হামিদ তাঁকে বলেছেন কোন চিন্তা নাই। হোটেল আকবরীয়া আছে। বগুড়ার নামকরা হোটেল। সবকিছু পাওয়া যায়। স্যার যেন খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা না করেন। কোন দুশ্চিন্তা করিনি। তবে ২৭ মার্চ ২০০৯ তারিখ দুপুর বেলা সার্কিট হাউজে খেতে বসেছি। সংগে আছেন নির্বাচন কমিশনের জেসমিন টুলী, মিহির সারওয়ার মোর্শেদ, মুখলেছার রহমান। ওনারা সবাই উপ-সচিব। খাওয়া শুরু করবো, দেখি সবকিছুতে মাছ আর মাংস। জেলা নির্বাচন অফিসার লোক পাঠালেন নতুন করে আমার জন্য তরকারী আনতে। নতুন করে খাবার আসলো, আলু-ভর্তা, শুটকি ভর্তা আর টাকি মাছের ভর্তা। অগত্যা আল-ভর্তা দিয়েই রসনা মিটাতো হলো।
পরের দিনগুলোতেও এর কোন ব্যতিক্রম হয়নি। ভেজিটেরিয়ান হওয়ার যন্ত্রণা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। যাক ভালো ভালোয় তিনদিন পার হয়ে গেল। ঢাকায় ফিরে আসলাম। ৩০ মার্চ ২০০৯ তারিখ অফিসে বসে আছি। সচিব মহোদয় ডেকে পাঠালেন। বসার সংগে সংগে তিনি বললেন,
- রফিক, প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহোদয়ের সংগে কথা হলো। তিনি আপনাকে নির্বাচনের সময় বগুড়া গিয়ে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।
কোন কথা বললাম না। শুধু আগের কয়েক দিনের স্মৃতি মনে পড়তে লাগলো। জিজ্ঞাসা করলাম,
- স্যার, কবে যেতে হবে?
- আগামীকাল যান! নির্বাচন ০২ এপ্রিল ২০০৯ শেষ হলে চলে আসবেন। সচিব মহোদয় জানালেন।
আমার এক সুহৃদ শুধাংশু। বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর পরিচালক (প্রশাসন)। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮৪ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। বউ নিয়ে একাডেমী কোয়ার্টারেই বসবাস করেন। কোথা থেকে জেনেছে আমি বগুড়া গিয়েছিলাম। তাঁদের সংগে দেখা করিনি। তাই সেলফোনে অভিযোগ।
- রফিক ভাই, বগুড়া এসে চলে গেলেন। বললেনও না, দেখাও করলেন না।
- দেখা না করে ভুল করেছি। দেখা করলে এভাবে না খেয়ে থাকতে হতো না। তোমার বউ অন্তত: আমার জন্য লতাপাতার ব্যবস্থা করতো। তাই এবার আর ভুল করবো না। বললাম আমি।
- আপনি আবার কবে আসছেন। শুধাংশুর জিজ্ঞাসা।
- বললাম, এইতো আগামীকাল বিকালে।
- রাতে আমার এখানে খেয়ে তারপর যাবেন।
- ঠিক আছে।
৩১.০৩.২০০৯ইং তারিখ বিকাল ৪টায় বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পথে আমিনূল আমাকে জানালেন-
- সার্কিট হাউজে আপনার জন্য ভেজিটেবল রান্নার ব্যবস্থা করেছি। এবার কোন অসুবিধা হবে না।
রাতে খাবো না জানালাম তাঁকে। বললাম যাওয়ার পথে পল্লী উন্নয়ন একাডেমী। ওখানে শুধাংশুর বাড়ীতে খেয়ে যাবো। যমুনা ব্রীজ পার হয়েছি। শুরু হলো ঝড়, শিলাপাত আর বৃষ্টি। একপা আগানো যায় না। হাইওয়ে ভিলাতে আশ্রয় নিলাম। রাত ১০.০০ টার দিকে ঝড় শেষ হলো। এর মধ্যে শুধাংশু কয়েকবার টেলিফোন করেছে। রওনা হবার আগে শুধাংশুকে বললাম,
- রাত অনেক হয়ে গেছে। তোমার ওখানে আজ আর খাওয়া হবে না।
শুধাংশু একমত হলো। তবে আমাকে খাওয়ানো বাদ দিবে না। বললো-
টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে একাডেমীর গেটে থাকবে। ওখান থেকে টিফিন ক্যারিয়ারগুলো আমরা নিয়ে নিবো। পরে সার্কিট হাউজে এসে খাওয়া যাবে। তাকে খুশি করতে চাই। রাজি হয়ে গেলাম। একাডেমীর গেইট হতে খাবার নিয়ে সোজা সার্কিট হাউজ। টিফিন বাটি খুলতেই দেখি, খাঁটি ঘি দিয়ে ভাজা সবজি।
বাটির মুখ বন্ধ করে আমিনুলকে দিয়ে বললাম,
- আপনারা খেয়ে নেন। আমি খাবো না।
সকালে নাস্তার টেবিলে বসে খুশি হলাম। আমিনুলের ব্যবস্থাপনায় সার্কিট হাউজে রান্না করা ভেজিটেবল। দুপুরেও সার্কিট হাউজেই খাবো।
লাইট হাউজে একটা এনজিও। ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পক্ষে বগুড়ায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলছে। একই সংগে তারা বগুড়ার সুশীল সমাজের সংগে মতবিনিময় করবে। লাইট হাউজ এ অনুষ্ঠানে আমাকে থাকতে অনুরোধ করেছেন। বগুড়ার রিটার্নিং অফিসার আমাকে লাইট হাউজে যেতে অনুরোধ করায় অনেকটা বাধ্য হয়েই সেখানে গেলাম। অনুষ্ঠান শেষ হতে দুপুর ২টা পার হয়ে গেল। লাইট হাউজ আমার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সার্কিট হাউজে রান্না করা ভেজিটেবল আর আমার ভাগ্যে জুটলো না। লাইট হাউজের কর্ণধারকে জানালাম,
- আমি ভেজিটেরিয়ান। বললাম
- কোন চিন্তা নাই। ভেজিটেবিলস্ এর ব্যবস্থা করা হবে।
খাওয়ার টেবিলে বসে দেখি, মাছ, মাংস, রোস্ট তার পাশে বেগুন আলুর সংগে টেংরা মাছ। শাক-ভাজি সংগে শুটকি। ডালের মধ্যে মাছের মুড়ো। সংগে শুটকি আর ইলিশ মাছের ভর্তা।
শুকনো কটা ভাত নিয়ে নাড়া-চাড়া করে এক সময় সবার অজান্তে উঠে পড়লাম। একাজটি আমাকে প্রায় করতে হয়। তাই বেশ পাঁকা হয়ে গেছি।
রাতে আবারও শুধাংশুর দাওয়াত। ঘি-এ ভাজা সবজি। কোনমতে একটা তরকারী দিয়ে খেয়ে বিদায় নিলাম।
০২.০৪.২০০৯ তারিখ উপ-নির্বাচন। সকালে নাস্তা সেরে কেন্দ্র পরিদর্শনে বাহির হলাম। দুপুরে খাওয়ার সময় ছিল না। রাতে জেলা প্রশাসকের বাসায় দাওয়াত।
টেবিলে সাজানো মাছ, মাংস, মাছের ভর্তা। সবজিতেও মাছ ও মাংস বাদ যায়নি। একজন মানুষের রসনা মিটানোর জন্য প্রায় সবকিছুই আছে। কিন্তু আমি ভেজিটেরিয়ান। জেলা প্রশাসক হুমায়ুন বললেন,
- স্যার। তা হলে কি খাবেন? স্যার ভুল হয়ে গেছে ডাল দিয়ে কটা ভাত খেয়ে নেন।
ডাল নিয়ে দেখি সংগে রয়েছে শুকনো টুকরো টুকরো কি যেন। তাতে মাংসের গন্ধ। বুঝলাম ডালে গরুর মাংসের শুটকী দেয়া হয়েছে।
- না হুমায়ন এটাও চলবে না। বললাম আমি।
- স্যারকে দুটো কলা আর আপেল দাও। হুমায়ন পিওনকে বললেন।
রাতে দুটো কলা আর একটা আপেল খেয়ে জেলা প্রশাসকের দাওয়াত শেষ করলাম। পরের দিন খুব সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
আমার ছোটখাটো অসুখ-বিসুখ হয় না। এটা নাকি ভেজিটেবল-এর জন্য। ভেজিটেরিয়ান বলে আমাকে প্রায় উনো খেয়েই থাকতে হয়। তাই বুঝি,
‘উনো খেয়ে দুনো বল!’
আমি বেশ ভালো আছি। আমি ভেজিটেরিয়ান।
Md. Rafiqul Islam, PhD. | ||